প্রকাশিত: ২২/০৬/২০১৭ ৮:২২ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৫৪ পিএম

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈকতে পা ফেলেই বলেছিলেন, ‘আমার বাবা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে বেশি ভালোবাসতেন। বাবার হাত ধরে এই কক্সবাজার সৈকতে প্রথমবার এসেছিলাম ১৯৬২ সালে।
এর পর এসেছিলাম ১৯৬৪ এবং বিয়ের পর ১৯৬৮ সালে। ’

এভাবে স্মৃতিচারণের পর পরই সামনে বালিয়াড়িতে বেশ কয়েকটি লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি দেখে অনেকটা উত্ফুল্ল হয়ে উঠেন তিনি। এক পর্যায়ে সৈকতের ফেনিল ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে ক্ষণকালের জন্য

নিসর্গে হারিয়ে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেই দিনের বিবরণ এমনভাবেই তুলে ধরেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর মেয়ে নাজনিন সরওয়ার কাবেরি।

গত ৬ মে কক্সবাজার-টেকনাফ দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী আকস্মিক নেমে পড়েছিলেন ইনানী সৈকতে। এ সময় সৈকতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নারীনেত্রী নাজনিন সরওয়ার কাবেরিও ছিলেন।

সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন সপরিবারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ঘুরে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যে যা-ই বলুক মেরিন ড্রাইভ বাংলাদেশের পর্যটনের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত করেছে। এই মেরিন ড্রাইভে বসেই সৈকত, সাগর আর সূর্যোদয় সবই অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। ’

স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে স্বপ্নের এই মেরিন ড্রাইভ সড়ক বাস্তবে যোগ করে দিয়েছে অনন্য এক উপভোগ্য স্থান। বিস্তৃত মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন গাঁও-গেরামের বাসিন্দারাও গোধূলি লগ্নে সূর্যাস্ত দেখতে ভিড় করেন সড়কটির ধারে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক চালুর সাথে সাথেই আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল

কক্সবাজার-ঢাকা বিমান চলাচলও। ৬ মে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের সম্প্রসারিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বোয়িং বিমান চলাচল। বর্তমানে প্রতিসপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শনিবার বাংলাদেশ বিমানের ৭৩৭ বোয়িং ফ্লাইট চলাচল করছে। সেই সাথে ইউএস বাংলা এবং রিজেন্ট এয়ারও কক্সবাজারে চালু করছে বোয়িং ফ্লাইট। বিমানের বোয়িং সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং বেসরকারি বিমানে চার হাজার টাকা ভাড়া।

এবার দেশবাসীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হচ্ছে, কক্সবাজারকে ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। একবাক্যে সারা বিশ্বে কক্সবাজারের পরিচিতি তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে ব্র্যান্ডিংয়ের কার্যক্রম চলানো হচ্ছে। এজন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে একটি কমিটি। ইতিমধ্যে কমিটির কয়েক দফা সভা

অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকেই কক্সবাজারের (লংগেস্ট স্যান্ডি বিচ) একমাত্র ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচয় তুলে ধরার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজি মো. আবদুর রহমান।

পর্যটনে এরকম বাড়তি সুযোগ সৃষ্টির পর সঙ্গত কারণেই পর্যটকের সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এসব সুযোগ সৃষ্টির পর পরই পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে যায়। রমজান শেষে ঈদের ছুটি হচ্ছে পর্যটক সমাগমের একটি বড় উৎসব।

টানা এক সপ্তাহেরও বেশি দিনের ছুটি রয়েছে এবারের ঈদে। সবারই ধারণা, এবারের দীর্ঘ ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক আসবেন কক্সবাজারে।

কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদেরও আশা, পর্যটনের পড়ন্ত মৌসুমে অন্তত কটা দিন ব্যস্ততা বাড়বে এবং সেই সাথে কিছুটা আয়-রোজগারও হবে। এবারের ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে পর্যটন ব্যবসা জমজমাট হওয়ার আশা এতদিন ব্যবসায়ীরা বুকে লালন করে আসছিলেন। কিন্তু একের পর এক টানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেই আশা বাস্তবে রূপায়নে সহায়ক হবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা গত ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার তাণ্ডবের পর কক্সবাজার উপকূলে গত সপ্তাহের কয়েক দিন বয়ে গেছে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং বর্ষণ। সেই সাথে একটানা ভারি বর্ষণে পার্বত্য তিন জেলা ও চট্টগ্রাম হয়ে গেছে লণ্ডভণ্ড। পাহাড়ধসে দেড় শতাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

এ রকম এক অমানবিক ঘটনার পর পরই ঈদের ছুটিতে বাস্তবে মানুষ আনন্দ-উৎসবে এবার কক্সবাজারমুখী হবেন কি পরিমাণের সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে প্রতিবছরের ঈদে যে হারে পর্যটক আগেভাগেই রুম বুকিং দিয়ে থাকেন এবার সেটাতে কিছুটা ছেদ পড়েছে।

যদিওবা এবার নানামুখী সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণেই সেই সুযোগ সুবিধাকে ভ্রমণপিপাসুরা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন সেটা দেখার বিষয়। এর পরেও সাগরপারের হোটেল-মোটেলে রুম বুকিং রয়েছে। তারকা হোটেল সি গালের কমার্শিয়াল ম্যানেজার হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ঈদের পরের দুই দিন আমার হোটেলের সব রুমই বুকিং হয়ে গেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৩০ জুন এবং ১ জুলাইও রুম বুকিং থাকতে পারে। ’

তবে পর্যটনের মোটেলগুলোতে এবারের চিত্র একদম ভিন্ন। পর্যটন মোটেল প্রবালের ম্যানেজার মিসেস টিনটিন রাখাইন বলেন, ‘গেল বারের মতো এবার রুমের অগ্রিম ভাড়া্ নেই বললেই চলে। গেল ঈদের ছুটিতে রুম অনেক আগেই বুকিং হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি মোটেই ভালো ঠেকছে না। ’

তিনি জানান, একমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই ভ্রমণপিপাসুরা এবার বেড়াতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন সম্ভবত।

কক্সবাজারের হোটেল কক্সটুডের ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার মো. আবু তালেব বলেন, ‘গেল বারের তুলনায় এবারের ঈদে রুমের জন্য তেমন পীড়াপীড়ি নেই। তবে ঈদের পরের দুই দিনের জন্য আমাদের রুম বুকিং রয়েছে। ’

হোটেল লংবিচের হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘আমাদের হোটেলে ২৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত তিনদিনের পুরোটা বুকিং রয়েছে। ’ তিনি জানান, ভ্রমণকারীরা আগেভাগেই রুম বুকিং নিয়েছে। এখন যদি কিনা সেই সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে তাহলে হয়তো বা কেউ আসবেন বা কারও অসুবিধা হতে পারে আসতে। তবু সব মিলিয়ে

এবারের ঈদে মোটামুটি পর্যটকের সমাগমের জন্য প্রস্তুত কক্সবাজার।

এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কক্সবাজারে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে ভ্রমণকারীদের জন্য। এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা। ২০১৪ সালে পর্যটকদের

নিরাপত্তার জন্য কক্সবাজার সৈকতে কাজ শুরু করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বর্তমানে ১২১ জন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য রয়েছেন এখানে। সৈকতে সার্বক্ষণিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। আগে ট্যুরিস্ট পুলিশে

পাঠকের মতামত

মা ও মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২, ৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য নুরুন্নাহার বেগম ৪৪ ...

আরাকান বিদ্রোহীর গুলিতে বাংলাদেশী যুবকের মৃ’ত্যু

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের গুলিতে এক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের ...